Breaking News

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিবর্তন: নির্বাক যুগ থেকে আজকের ঢালিউড

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এক দীর্ঘ এবং গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। ১৯০০-এর দশকের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত, এই শিল্প নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছে। নির্বাক চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সবাক, সাদা-কালো থেকে রঙিন, আর এখনকার ডিজিটাল যুগের ঢালিউড—এই পুরো যাত্রাপথটি ছিল এক অনন্য বিবর্তনের গল্প। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিবর্তনের মূল পর্যায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ: প্রথম পদক্ষেপ

১৯০০-এর দশকের প্রথম দিকে, ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে এই ভূখণ্ডে চলচ্চিত্রের আগমন ঘটে। ১৯১৩ সালে ঢাকার সদরঘাটে প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়। তবে স্থানীয়ভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয় এর কিছু পরে। ১৯২৭-২৮ সালে ঢাকায় নির্মিত হয় প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র সুকুমারী। যদিও এটি সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র ছিল না, তবুও এটি ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এরপর ১৯৩১ সালে দ্য লাস্ট কিস নামে আরও একটি নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এই চলচ্চিত্রগুলো ছিল মূলত শৌখিন উদ্যোগ, যা ভবিষ্যতের চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে।

সবাক চলচ্চিত্রের আগমন: নতুন দিগন্ত

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তখন ঢাকায় কোনো চলচ্চিত্র স্টুডিও ছিল না। তাই এখানকার নির্মাতাদের কলকাতায় গিয়ে কাজ করতে হতো। এরপর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (PFDC) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (FDC) নামে পরিচিত হয়। এফডিসি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্থানীয়ভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম হয়।

১৯৫৬ সালে নির্মিত হয় বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ। আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক ছিল। এরপর থেকে নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। এই সময়টিতে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে সামাজিক গল্প, পারিবারিক মেলোড্রামা এবং সাহিত্যনির্ভর কাহিনি প্রাধান্য পেত। এর মধ্যে আকাশ আর মাটি, হারানো দিন এবং চান্দা উল্লেখযোগ্য। এই দশকে বাংলা ও উর্দু—উভয় ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মিত হতো।

স্বর্ণযুগ: ষাট ও সত্তর দশক

ষাটের দশক ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের স্বর্ণযুগ। এই সময়টাতে চলচ্চিত্রের মান ও সংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি পায়। ফতেহ লোহানী, জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান, এহতেশাম এবং সালাহউদ্দিনের মতো গুণী নির্মাতারা এই সময়ে কাজ করেছেন। কখনো আসেনি, কাঁচের দেয়াল, জীবন থেকে নেয়া—এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র এই সময়েই নির্মিত হয়েছে। জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটি শুধু একটি সিনেমা ছিল না, বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক দলিল, যা বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা এবং সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা এবং সুভাষ দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। এই সময়ে বাণিজ্যিক এবং শৈল্পিক উভয় ধারার চলচ্চিত্রই সমান তালে নির্মিত হতে থাকে।

বাণিজ্যিকীকরণ ও নব্বইয়ের দশক: তারকাদের জন্ম

আশির দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। এই সময়টাতে অ্যাকশন এবং রোমান্টিক ঘরানার চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ জে মিন্টু, কাজী হায়াৎ এবং দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মতো পরিচালকরা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ধারাকে জনপ্রিয় করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল এবং পরবর্তীতে সালমান শাহ, ওমর সানি ও শাবনূরের মতো তারকারা এই সময়ে দর্শকদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাদের উপস্থিতিতে ঢালিউড এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

নব্বইয়ের দশক ছিল ঢালিউডের তারকাদের দশক। সালমান শাহের আবির্ভাব বাংলা চলচ্চিত্রে এক নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করে। তার স্টাইল, অভিনয় এবং জনপ্রিয়তা ছিল অদ্বিতীয়। তার প্রতিটি চলচ্চিত্রই বক্স অফিসে সফল হতো। এই সময়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি দর্শকদের মাঝে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করে।

আধুনিক যুগ ও নতুন ধারার চলচ্চিত্র

২০০০-এর দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে কিছুটা স্থবিরতা আসে। পুরনো ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের আগ্রহ হারাতে থাকে। তবে এরপরই নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নিয়ে আসেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নুরুল আলম আতিক এবং গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মতো পরিচালকরা বাস্তবসম্মত ও পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাদের হাত ধরে ঢালিউডে এক নতুন শৈল্পিক বিপ্লব আসে।

বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একটি মিশ্র ধারা বিদ্যমান। একদিকে যেমন বাণিজ্যিক অ্যাকশন ও রোমান্টিক চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি বিকল্প এবং স্বাধীন চলচ্চিত্রও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মনপুরা, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, হাওয়া এবং পরাণ-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো শুধু বক্স অফিসে সফল হয়ন

অপু বিশ্বাস: ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকার জীবন কাহিনী

About abdulgoni

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *